বন্দর, রূপগঞ্জ ও সোনারগাঁয়ে ১০৩ হেক্টর জমিতে ফুলের চাষ

নাঃগঞ্জে ১০ কোটি টাকার ফুল বিক্রির টার্গেট

বাংলাবাজার বার্তা ডেস্ক :

প্রকাশ: ২২:১৯, ৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

নাঃগঞ্জে ১০ কোটি টাকার ফুল বিক্রির টার্গেট

প্রকৃতীতে হালকা শীতের আমেজ এখনো বিরাজমান। তবুও মাঘের শেষ মানেই ফাল্গুন মাসের হাতছানি। নারায়ণগঞ্জের ফুলের গ্রামগুলোতে ফুলচাষীরা ব্যাপক প্রস্তুতী নিচ্ছে। নিয়মিত ফুলের বাগানগুলো পরিচরজা করছেন। নারায়ণগঞ্জ জেলার রূপগঞ্জ, সোনারগাঁও এবং বন্দর উপজেলার সাবদী, দীঘলদি , কলাগাছিয়া, মদনগঞ্জ, গোকুল দাসের বাগসহ আশপাশের গ্রামের ফুলচাষীরা এবার কমপক্ষে ১০ কোটি টাকার ফুল বিক্রির টার্গেট করেছেন।

নারায়ণগঞ্জ জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত উপ-পরিচালক মুহাম্মদ শাহ আলম জানান, চলতি মৌসুমে জেলায় ১০৩ হেক্টরেরও বেশি জমিতে বানিজ্যিকভাবে ফুলের চাষ হয়েছে। এরমধ্যে বন্দর উপজেলার কলাগাছিয়া ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামে ৮০ হেক্টর জমিতে ও রূপগঞ্জে ১৬ হেক্টর জমিতে ও সোনারগাঁ উপজেলায় সাড়ে ৪ হেক্টর জমিতে ফুলের চাষ হয়েছে। ফুল চাষের সাথে এসব এলাকার ৩০০ কৃষক পরিবার জড়িত। ফেব্রুয়ারি মাস উপলক্ষে নারায়ণগঞ্জ, ঢাকা ও নরসিংদীসহ দেশের বিভিন্ন জেলার পাইকারি বিক্রেতাদের কাছে এই ফুল সরবরাহ করা হয়।

নারায়ণগঞ্জের বন্দর উপজেলার কলাগাছিয়া এলাকা ফুল চাষের জন্য জনপ্রিয়। প্রতি বছর ফেব্রুয়ারি মাসকে ঘিরে ব্যবসার টার্গেট করেন এখানকার  ব্যবসায়ীরা। উপজেলার সাবদি গ্রাম ‘ফুলের রাজ্য’ হিসেবে পরিচিত। পহেলা ফাল্গুন, বিশ্ব ভালোবাসা দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসকে সামনে রেখে এ অঞ্চলের তিন শতাধিক ফুল চাষি ও তাদের পরিবার এখন ব্যস্ত সময় পার করছেন। এ বছর অন্তত ১০ কোটি টাকার ফুল বিক্রির আশা করছেন তারা।

চলছে ফেব্রুয়ারি মাস। এ মাসের ১৪ ফেব্রুয়ারি বিশ্ব ভালোবাসা দিবস ও ২১ ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসকে কেন্দ্র করে ব্যবসায়ের ছক কষেছেন ফুল চাষিরা। শুধু নারায়ণগঞ্জ নয় রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় যায় এ ফুল।

শুক্রবার (৭ ফেব্রুয়ারি) উপজেলার সাবদী এলাকায় সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, চারদিকে যেখানেই চোখ যায় শুধু ফুল আর ফুল। চারিদিকে ফুটে আছে গাঁদা, জারবেরা, জিপসি, গ্লাডিওলাস, ডালিয়া, কাঠ মালতী, কামিনী, বেলি, জবা, গন্ধরাজসহ বিভিন্ন রঙের প্রায় ২৫ প্রজাতির ফুল।

এখানে সকাল থেকে ফুল বাগানগুলো দেখতে বিভিন্ন এলাকা থেকে আসা দর্শনার্থীদের ভিড় লক্ষ্য করা যায়। তারা ফুল বাগান দেখার পাশাপাশি মেতে উঠেন ছবি তুলতে। এ সময় চাষিরা তাদের সতর্ক করছেন, ফুল ছিঁড়েন না ও বাগান নষ্ট করবেন না। বিভিন্ন সময়ে দর্শনার্থীরা অসতর্ক থাকলেও এবার এ ব্যাপারে তাদের সতর্কতায় সন্তোষ প্রকাশ করেছেন চাষিরা।

বন্দর উপজেলার কলাগাছিয়া ইউনিয়নের সাবদী, ফেলারদী, আখতলা, মুখ কলদী, দীঘলদী, মাধবপাশা, আরজাদি, শেলসারদী ও বন্দর ইউনিয়নের চৌধুরীবাড়ি, চিনারদী, মোল্লাবাড়ি, কলাবাগ, নবীগঞ্জ, তিনগাঁও এলাকায় বিভিন্ন জমিতে বাণিজ্যিকভাবে বিভিন্ন প্রজাতির ফুলের চাষ করেছেন চাষিরা।

প্রতিটি বাগানে ফুল চাষিদের ফুলগাছের পরিচর্যায় ব্যস্ত সময় পার করতেও দেখা গেছে।  কৃষকরা জানান, এ বছর ফুলের উৎপাদন গত বছরের তুলনায় কিছুটা কম হয়েছে তবে তাতে তারা খুশি। এবার ভালো দামের প্রত্যাশা তাদের।

তারা জানান, এবার ফুলের সব বাগান হয়তো ১৪ ফেব্রুয়ারির বাজার ধরতে পারবে না কারণ অনেক ফুল এখনো পরিপক্ক হয়নি। তবে ২১ ফেব্রুয়ারি পরবর্তী টার্গেট রয়েছে তাদের। চাষাবাদ আরেকটু আগে শুরু করতে পারলে এবার পুরোপুরি টার্গেট সম্পন্ন হতো ব্যবসায়ীদের।

স্থানীয়রা জানান, ১৯৮০ সালে গাঁদা ফুল, কাঠ মালতী ফুল দিয়ে এ উপজেলার সাবদী এলাকায় ফুলের চাষ শুরু হয়। ধীরে ধীরে ব্যবসা প্রসারিত হয়ে এখন ফুল চাষ করে স্থানীয় লোকজন অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী।

সাবদী এলাকার ফুল চাষি রহিম মিয়া জানান, এবার ঝড়-বৃষ্টি না হওয়ায় আমরা ভালো ফলন পেয়েছি। ফুলের বাগানগুলো এখন ফুলে ফুলে ভরা, ছড়াচ্ছে সুভাষ। আমাদের সঙ্গে ব্যবসায়ীরা ইতোমধ্যে যোগাযোগ শুরু করেছেন। অনেক চাষি বাগানসহ ফুল বিক্রি করে ফেলেছেন। আগামী ১০ ফেব্রুয়ারি পর থেকে ব্যবসায়ীরা ফুল নিয়ে যাওয়া শুরু করবেন। এবার পুরো উপজেলা মিলিয়ে ১০ কোটি টাকার ব্যবসা হবে বলে প্রত্যাশা করছেন তারা । তবে অনেক বাগান এবার হয়তো ১৪ ফেব্রুয়ারির বাজার ধরতে পারবে না। কারণ অনেকে চাষাবাদ দেরিতে শুরু করেছেন।

তিনি জানান, প্রতি বছর দর্শনার্থীরা এসে বাগান নষ্ট করে থাকেন। তবে এবার তা করছেন না। এবার দর্শনার্থীরা সচেতন থাকায় আমরা কিছুটা স্বস্তিতে আছি।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, গত এক দশক ধরে ব্রহ্মপুত্র নদের তীর ঘেঁষা নারায়ণগঞ্জের বন্দর উপজেলার সাবদি, দীঘলদি ও মাধবপাশাসহ আটটি গ্রামে প্রায় চারশ বিঘা জমিতে বাণিজ্যিকভাবে বিভিন্ন ধরনের ফুলের চাষ হচ্ছে। ফুল চাষ করে স্বচ্ছলতার মুখ দেখেছেন এখানকার হতদরিদ্র কৃষকেরা।

সরেজমিনে দেখা গেছে, বিভিন্ন রঙের গাঁদা, চেরি, চন্দ্রমল্লিকা, জবা, সূর্যমুখী, গ্যালেরিয়া, ডালিয়া, স্টার, মাম, কাঠমালতি, বেলি, ঝাড়বাড়া ও জিপসিসহ অন্তত চল্লিশ প্রকারের দেশি-বিদেশি হরেক রকমের ফুল চাষ হচ্ছে এখানকার বাগানগুলোতে।

দেশের ফুল ব্যবসার প্রধান কেন্দ্র রাজধানীর শাহবাগের চাহিদার বড় একটি অংশ পূরণ করে এখানকার বাগান মালিকরা। সময়ের সাথে গত কয়েক বছর ধরে এই সব বাগান  সাধারণ মানুষের বিনোদন কেন্দ্রে পরিণত হয়েছে। আর তাই মনমুগ্ধকর সৌন্দর্য উপভোগ করতে প্রতিদিন বিভিন্ন এলাকা থেকে শত শত দর্শনার্থী সাবদি দীঘলদি এলাকায় ভিড় করছেন।

দীঘলদি গ্রামের বাগান মালিক সুধির চন্দ্র হালদার জানান, এই বছর ফুলের আশাতীত ফলন হয়েছে। সাবদি, দীঘলদি ও মাধবপাশার সবগুলো বাগানে যে ফুলের ফলন হয়েছে তা কমপক্ষে বিশ কোটি টাকা বিক্রি হবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।

তিনি জানান, চাহিদা থাকা সত্ত্বেও আর্থিক সমস্যার কারণে এ অঞ্চলে ব্যাপকভাবে চাষ করা সম্ভব হচ্ছে না।

শিক্ষার্থী মো. ইলিয়াছ , হ্যাপী ও সামিয়া বলেন, বিশ্ব ভালোবাসা দিবস ও পহেলা ফাল্গুন উপলক্ষে এরই মধ্যে ফুলের চাহিদা বেড়েছে। অন্য সময়ের চেয়ে ফুলের দাম তিনগুণ বেশি। ভালোবাসা দিবসে ফুলের চাহিদা বেশি হয়ে ওঠে, কারণ এটি ভালোবাসা প্রকাশের উপযুক্ত উপহার। ফুলের মাধ্যমে মানুষের মধ্যে ভালোবাসার আনন্দ ও মনোমুগ্ধতা বেড়ে যায়। ব্যবসায়ীরা ঠিক এ সুযোগটি নিচ্ছেন। এটি কিন্তু ঠিক না।

নারায়ণগঞ্জ জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত উপ-পরিচালক মুহাম্মদ শাহ আলম বলেন,ফুল চাষকে আরও প্রসারিত করতে ইতোমধ্যে নানা প্রক্রিয়া গ্রহণ করা হয়েছে। আমরা ফুল বাগান মালিকদের সাথে কথা বলেছি। তাদের সমস্যার ব্যাপারে আমরা খোঁজ-খবর নিয়েছি। আমরা বাগান মালিকদেরকে বলে এসেছি যদি আর্থিক সহায়তার প্রয়োজন হয় সেক্ষেত্রে কৃষি ব্যাংকের মাধ্যমে আমরা ব্যবস্থা করব।

উপজেলা পরিষদ ও জেলা পরিষদের ঋণ কমিটিতে তাদের বিষয়টি উপস্থাপন করে সহজ শর্তে বাগান মালিকদের ঋণ দেয়ার ব্যাপারে সব ধরনের সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছেন জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের এই কর্মকর্তা।

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

সম্পর্কিত বিষয়:

আরও পড়ুন