সাধু সাবধান: রিয়াদ চৌঃ এর ঘটনা ও বিএনপির আত্মশুদ্ধি !

বাংলাবাজার বার্তা ডেস্ক :

প্রকাশ: ০০:২৮, ১৭ মে ২০২৫

সাধু সাবধান: রিয়াদ চৌঃ এর ঘটনা ও বিএনপির আত্মশুদ্ধি !

নারায়ণগঞ্জে একটা সুনসান শোরগোল চলছে। বাইরে যেন কিছুই হয়নি, অথচ ভিতরে ভিতরে দগদগে জ্বালা। রিয়াদ চৌধুরীর গ্রেফতার এবং বহিষ্কার সেই আগুনে ঘি ঢেলে দিয়েছে। এটা শুধু একজন নেতার পতনের ঘটনা নয়, এটা বিএনপির তরুণ নেতৃত্বের এক ধরনের আত্মদর্শনও।

রিয়াদের বিরুদ্ধে অভিযোগ নতুন নয়। তারকাঁটা ঘেরা কাহিনি অনেক আগে থেকেই ঘুরছিল গলির মোড়ে মোড়ে, চায়ের স্টলে, এমনকি কেন্দ্রীয় নেতাদের কানে কানে। কিন্তু রাজনৈতিক দলগুলো এমন জায়গায় এসে দাঁড়ায়, যেখানে অভিযোগ থাকলেও প্রতিকার হয় না—কারণ অভিযোগকারীও নিজের আয়নায় মুখ দেখেন না।

তবে এবার যেন ব্যতিক্রম। ফতুল্লা থানা বিএনপি সময়ের দাবিতে যে ব্যবস্থা নিয়েছে, সেটা প্রশংসনীয়ই শুধু নয়, নজিরবিহীন। একে অনেকেই বলছেন "পুনর্জাগরণের শুরু"। অন্যদিকে, সিনিয়র নেতাদের কেউ কেউ হতাশ গলায় বলছেন, "এটাই তো বিএনপির ট্র্যাজেডি—যখনই মাথা তুলে দাঁড়াতে যায়, তখনই পায়ের নিচের মাটি সরে যায়।"

নারায়ণগঞ্জের রাজনীতি বরাবরই রঙিন ছিল, কিন্তু সেই রঙ যে কতখানি কৃত্রিম ছিল তা এখন দিনের আলোয় পরিষ্কার হচ্ছে। ‘চাঁদাবাজি হয়’—এই সত্যিটা অনেকে মানতে চান না, কিন্তু সবাই জানে। এতদিন যারা 'হাজী সাহেব' সেজে চুপ করে ছিলেন, এখন তারা মুখ খুলছেন। কারণ বোঝা যাচ্ছে, খেলাটা এখন নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাচ্ছে।

গিয়াসউদ্দিনের বক্তব্যে একটা বিষয় পরিষ্কার—তারেক রহমান এখন আর কেবল লন্ডনের রাজনৈতিক দূরবীন দিয়ে দল পরিচালনা করছেন না, তিনি যেন ক্রমশ এক ‘রাজনৈতিক রেঞ্জার’ হয়ে উঠেছেন। দলীয় শৃঙ্খলা রক্ষায় তিনি কাউকে ছাড় দেবেন না, এমন মেসেজ দিতে চেয়েছেন গিয়াসউদ্দিন।

তবে প্রশ্ন হলো, এতদিন যারা বিভিন্ন ‘কিরামুন কাতেবিন’-এর ছত্রছায়ায় থেকে নিজেদেরকে ক্ষমতার শীর্ষে নিয়ে গিয়েছিল, তাদের কী হবে? এখন কি সেই মুখোশ পড়ে থাকা নেতাদের মুখোশ খোলার সময় এসেছে? নাকি শুধু একটা ‘পাবলিক শো’ হলো, যাতে জনমতকে শান্ত রাখা যায়?

রিয়াদ চৌধুরীর ঘটনা হলো সেই আংশিক নাটকের দৃশ্য যেখানে পর্দা উঠেছে, কিন্তু শেষ অঙ্ক এখনও বাকি। হয়তো আরও কিছু নাম আসবে, কিছু নতুন বহিষ্কার হবে, কেউ কেউ হঠাৎ হজ পালনে চলে যাবেন বা অসুস্থ হয়ে পড়বেন—কিন্তু জনগণের চোখ ফাঁকি দেওয়া এখন সহজ নয়।

বিএনপির সামনে এখন সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ—দলের ভেতরে শুদ্ধি অভিযান চালানো, তা যেন আত্মঘাতী না হয়ে পড়ে। কারণ অতীত বলে, বিএনপিতে শুদ্ধির নামে অনেক সময় “ভালোদের বিদায়, খারাপদের পুনর্বাসন” হয়েছে।

গিয়াসউদ্দিন হয়তো এই বার্তা দিতে চেয়েছেন—যারা নেতা’ হচ্ছেন, তারা যেন ‘নেতৃত্ব’ করেন,  লিডারশিপ’ নয়। কারণ জনগণ নেতা চায়, দালাল নয়; আদর্শবান রাজনীতিক চায়, ফেইসবুক ফেইম চায় না।

তারেক রহমানের প্রত্যাবর্তনের আগেই যদি বিএনপি নিজেকে পরিষ্কার না করতে পারে, তাহলে ফিরেই বা কী করবেন তিনি?

নারায়ণগঞ্জের রাজনীতি এখন শুধু স্থানীয় বাস্তবতা নয়, এটা যেন কেন্দ্রীয় বিএনপির আইসবার্গের চূড়া। নিচে কতটুকু বরফ জমে আছে, তা হয়তো একদিন ভেঙে পড়বে। প্রশ্ন হলো, সেই ভাঙনের জন্য দল কতটা প্রস্তুত?

রিয়াদ চৌঃ কেবল একজন ব্যক্তি নন, তিনি একটি চিত্র। সেই চিত্র ভাঙা মানে পুরনো রাজনীতির ফ্রেমটা ছিঁড়ে ফেলা। এখন সময় এসেছে বিএনপি ঠিক করুক—ওরা নতুন ফ্রেমে নতুন ছবি আঁকবে, নাকি পুরোনো ছবির ধুলা ঝেড়ে আবার দেয়ালে টাঙাবে।

সাধু সাবধান, যেন দলীয় শুদ্ধি অভিযান রাজনীতির কসাইখানায় পরিণত না হয়।

সম্পর্কিত বিষয়:

আরও পড়ুন