গ্যাসের চাপ দিনে শূন্য দশমিক ৫ থেকে ১ পিএসআই এ নেমে আসে

নাঃগঞ্জে গ্যাস সংকটে শিল্পকারখানায় ধ্বস

বাংলাবাজার বার্তা ডেস্ক :

প্রকাশ: ১৯:৫১, ২১ জুন ২০২৫

নাঃগঞ্জে গ্যাস সংকটে শিল্পকারখানায় ধ্বস

নারায়ণগঞ্জে শিল্পখাতে গ্যাস সংকট চলছে দীর্ঘদিন ধরে। এক সময়ের গর্ব, দেশের অন্যতম শিল্পঘাঁটি নারায়ণগঞ্জ আজ নিঃশব্দে ধুঁকছে। রঙিন ব্যানার-ফেস্টুনে ছেয়ে থাকা নগরীর শোভাবর্ধনকারী বিলবোর্ডগুলো যেন হারিয়ে গেছে শিল্প-অর্থনীতির বিবর্ণতায়। আর এই ধসের কেন্দ্রে রয়েছে ভয়াবহ গ্যাস সংকট। ২০২৪ সালের অক্টোবর থেকে শুরু হওয়া এই সংকট দিন দিন তীব্রতর হচ্ছে। বিশেষ করে রূপগঞ্জ, সিদ্ধিরগঞ্জ, ফতুল্লা ও বন্দর উপজেলার ছোট-বড় কারখানাগুলোয় গ্যাসের চাপ নেমে এসেছে একেবারে শূন্য দশমিক ৫ পিএসআইতে। অথচ সচল উৎপাদনের জন্য প্রয়োজন ১৫-২০ পিএসআই।

শিল্পখাতে গ্যাস সংকট দীর্ঘদিনের। এরই মধ্যে শণিবার (২১ জুন) নারায়ণগঞ্জ ঘুরে গেলেন বাংলাদেশ তেল, গ্যাস ও খনিজসম্পদ কর্পোরেশন (পেট্রোবাংলা) এর চেয়ারম্যান মো. রেজানুর রহমান ও তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিসন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) শাহনেওয়াজ পারভেজ। নারায়ণগঞ্জ জেলার আড়াইহাজার উপজেলার তীব্র গ্যাস সংকটে শতাধিক শিল্প কারখানার উৎপাদনে ধস নেমেছে। এতে বন্ধ হয়ে গেছে কয়েকটি প্রতিষ্ঠান। ব্যাপক আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়েছেন কারখানার মালিকরা। প্রায় তিন বছর ধরে গ্যাস সংকটের এ চিত্র বলে অভিযোগ তুলেছে প্রতিষ্ঠানগুলো।

তারা বলছে, কম্প্রেসড ন্যাচারাল গ্যাস (সিএনজি) এবং ডিজেলচালিত জেনারেটরে খরচ বাড়ার কারণে বাড়ছে উৎপাদন ব্যয়। কমেছে উৎপাদন সক্ষমতা। দ্রুত এই পরিস্থিতি বদলাতে না পারলে লোকসানের পাল্লা আরও ভারী হবে।

শনিবার আড়াইহাজার উপজেলার দুপ্তারা ইউনিয়নের খানপাড়া এলাকায় অবস্থিত লিড প্লাটিনাম সনদপ্রাপ্ত সবুজ কারখানার স্বীকৃতি পাওয়া ‘মিথিলা টেক্সটাইলের ওভেন ডাইং’ কারখানা পরিদর্শন শেষে চেয়ারম্যান মো. রেজানুর রহমান বলেন, ‘আমি সরেজমিনে গ্যাস সরবরাহ দেখতে এসেছিলাম। গ্যাস সংকটের সত্যতা পেয়েছি। আমরা এই সংকট উত্তরের জন্য কাজ করছি।’

মিথিলা গ্রুপের চেয়ারম্যান আজহার খান জানান, ২০২৪ সালের অক্টোবরের পর থেকে গ্যাসের চাপ দিনের বেলায় শূন্য দশমিক ৫ থেকে ১ পিএসআই এ নেমে আসে। আর রাতের বেলায় দেড় থেকে ২ পিএসআই আসে। এ অবস্থায় কারখানা চালু রাখা কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে। পুরো উপজেলায় দেড়শতাধিক শিল্প কারখানার উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে।

এমডি শাহনেওয়াজ পারভেজ জানান, সারাদেশেই গ্যাসের সাপ্লাই কম। অন্যদিকে যেখান থেকে গ্যাস সাপ্লাই হচ্ছে, সেখান থেকে আড়াইহাজার উপজেলা সর্বশেষ প্রান্তে অবস্থিত। ফলে অন্য মিল কারখানাগুলো গ্যাস টানার পরে আড়াইহাজার এলাকায় গ্যাসের চাপ তেমন থাকে না। সরকার এ সমস্যা থেকে উত্তোরণের জন্য কাজ করছে।

বহু মালিক বলছেন, ভোররাতে সামান্য গ্যাস পাওয়া গেলেও সকাল ৮টার পর থেকে চুল্লি নিভে যায়। কাপড় রঙ করা যায় না, ফিনিশিং হয় না। একেকটা কারখানার ভিতরে যেন মরুভূমির সুনসান। লোহার চুল্লিগুলো নিথর দাঁড়িয়ে, কর্মীদের চোখে দুশ্চিন্তার ছাপ।

শুধু পোশাক নয়, ডাইং, প্রসেসিং, প্লাস্টিক, কেমিক্যাল ও নিটিং কারখানাগুলোতেও বিরূপ প্রভাব পড়েছে। উৎপাদন ৭০ শতাংশ কমে গেছে বলে জানায় ফতুল্লার বিসিক শিল্পনগরীর একটি সমিতি।

জেলার একটি সমন্বিত হিসাব বলছে—গত আট মাসে গ্যাস সংকটের কারণে কমপক্ষে ১ হাজার ১৫০ কোটি টাকার উৎপাদন ক্ষতি হয়েছে। অস্থায়ীভাবে বন্ধ হয়ে গেছে ৫০টির বেশি ছোট কারখানা। এর বাইরেও প্রায় ১২০টি কারখানা টিকে আছে কোনোরকমে।

কারখানাগুলো বন্ধ হওয়ায় কাজ হারিয়েছেন অন্তত ৮ হাজার শ্রমিক। এদের অনেকেই নারায়ণগঞ্জ শহর ও আশপাশের মেসে বা বাসায় পরিবার নিয়ে থাকতেন। এখন পরিবার পরিজন নিয়ে বিপাকে তারা।

সম্পর্কিত বিষয়:

আরও পড়ুন