এ বছর রাস্তার উপর হাট বসার অনুমতি দিবেনা জেলা প্রশাসন

নাঃগঞ্জে কোরবানির পশুর চাহিদা দেড়লাখ

বাংলাবাজার বার্তা ডেস্ক :

প্রকাশ: ০০:৩৭, ১৮ মে ২০২৫ | আপডেট: ০০:৩৯, ১৯ মে ২০২৫

নাঃগঞ্জে কোরবানির পশুর চাহিদা দেড়লাখ

চলতি বছর নারায়ণগঞ্জ জেলায় কোরবানির পশুর চাহিদা কেমন হবে ? সংশ্লিষ্ট লোকজন ও খামারিরা বলছেন, আর যাই হোক সংখ্যাটা দেড় লাখের নিচে কখনোই নামবেনা। বরং বাড়তে পারে। তবে এবার ভারতীয় সীমান্ত পথে কোরবানির পশু আসা নিয়ে অনিশ্চয়তা তৈরী হয়েছে। এমনটা হলে কোরবানির পশুর দাম বাড়তে পারে।

নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রাণিসম্পদ কার্যালয়ের তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছর (২০২৫) নারায়ণগঞ্জ জেলায় কোরবানির পশুর চাহিদা ৮৬ হাজার ৫৪৯ টি। চাহিদার বিপরীতে সরবারহ রয়েছে ৬০ হাজার ৯৬৪টি। পশুর ঘাটতি রয়েছে ৩০ হাজার ৮১৩ টি।

তবে সরকারি এই পরিসংখ্যানের সাথে একমত নন স্থানীয় খামারী ও গবাদি পশুর মহাজনরা। তাদের মতে, শেষ পর্যন্ত সিরাজগঞ্জ, চৌহালি ও পাবনাসহ বিভিন্ন এলাকা থেকে কোরবানির পশু আসতে শুরু করলে নারায়ণগঞ্জে কোরবানির পশুর সরবারহ ও চাহিদা দু’টোই বেড়ে যায়। সেই হিসেবে এ বছর নারায়ণগঞ্জ জেলায় কোরবানির পশুর চাহিদা দেড় লাখের উপরেই থাকবে। দেড়লাখের নিচে নামবেনা।

গেল বছর নারায়ণগঞ্জে মোট কোরবানির পশুর চাহিদা ছিল ১ লাখ ৬৬ হাজার ৮০৩ টি। এর বিপরীতে জেলার পাঁচটি উপজেলায় প্রায় ১০ হাজার খামারে (যার মধ্যে ৪৩২৭ জন রেজিস্টার্ড ও বাকিগুলো মৌসুমি খামারি) ৪৩ হাজার ৬৬০টি ছাগল, ১ হাজার ৩৩৩টি ভেড়া ও ২৫ হাজার ৯৮৯টি গরু কোরবানির উপযোগী রয়েছে। কোরবানির জন্য চাহিদার বাকি পশুগুলো দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে অন্যান্য বছরের মতো হাটগুলোয় আসবে।

২০২৪ সালে দাম কিছুটা বাড়ায় এ বছর (২০২৫) আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন চামড়া ব্যবসায়ীরা। তারা বলেন, গতবছর ঢাকার বাইরে নারায়ণগঞ্জে চামড়ার দাম সর্বনিম্ন ১ হাজার টাকা নির্ধারণ করে দিয়েছে সরকার। আশাকরি এবার লোকসান কাটিয়ে কিছুটা লাভের মুখ দেখা যাবে। তবে মৌসুমী চামড়া বিক্রেতাদের কারণে আমরা ক্ষতিগ্রস্ত হই। ওরাই বাজারটা নষ্ট করে দেয়।

দ্বিগুবাবুরবাজারে মাংসপট্টিতে এ ব্যাপারে নারায়ণগঞ্জের চামড়া ব্যবসায়ীদের সাথে আলাপকালে তারা বলেন, ২০২০ সালে জেলায় এক লাখ দশ হাজার পিস পশুর চামড়া সংগৃহীত হয়েছিল। চামড়ার কারবারে লোকসান হয়নি।  সেবার চামড়ার দাম উঠেছিল সর্বোচ্চ ৫০০ টাকা।

তবে পরের বছর ২০২১ সালে চামড়ায় দাম পাইনি। ২০২২ সালেও চামড়ায় লোকসান হয়েছে। ২০২৩ সালেও কোনমতে লোকসান ঠেকানো গেছে। ২০২৪ সাল চামড়ার বাজার কেমন যাবে কে জানে। তবে দামটা একটু বাড়ায় চামড়া ব্যবসায়ীরা আশাবাদি।

নারায়ণগঞ্জ জেলায় ২০২৪ সালে কোরবানির চামড়ার টার্গেট ছিল দেড়লাখ পিস।  জেলায় পশু কোরবানির টার্গেট ছিল ১ লাখ ৬৬ হাজার ৮০৩। আপাতত  জেলার খামারগুলোতে চাহিদার অর্ধেকেরও কম অর্থাৎ ৭১ হাজার ২৩৫টি পশু আছে।

গতবারের তুলনায় এবার (২০২৫) নারায়ণগঞ্জে বেড়েছে কোরবানির পশুর চাহিদা। গতবার নারায়ণগঞ্জে মোট গরু কোরবানি হয় ১ লাখ ৬৬ হাজার । এবারের চাহিদাও এরকমই হবে। 

নারায়ণগঞ্জ জেলায় গত ২০২৩ সাল কোরবানির টার্গেট ছিল ১ লাখ ১৮ ‘শ । চামড়া সংগ্রহের টার্গেটও ছিল ১ লাখ ১৮ ‘শ এর কাছাকাছি। নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলায় কোরবানির টার্গেট ২০ হাজার।

বন্দর উপজেলায় ২০ হাজার। রূপগঞ্জ উপজেলায় ২০ হাজার ৫০ টি, আড়াইহাজার উপজেলায় ২০ হাজার এবং সোনারগাঁ উপজেলায় কোরবানির টার্গেট ২০ হাজার।

বিশেষায়িত খামার ছাড়াও সাধারণ খামার ও কৃষকরা বাড়িতে গবাদিপশু পালন করে কোরবানির জন্য তৈরী করছে। এ বছরের চামড়া সংগ্রহের টার্গেট পূরণ হয়েছে বলে জানিয়েছেন জেলা প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা।

সরকার গত বছর চামড়ার দাম নির্ধারণের পর থেকেই চামড়া ব্যবসায়ীরা হতাশা ব্যক্ত করেছিলেন। ২০২৩ সালে ২৫ জুন ঈদুল আজহায় কোরবানির গরুর লবণযুক্ত প্রতি বর্গফুট চামড়ার দাম ঢাকায় নির্ধারণ করা হয়েছিল ৫০-৫৫ টাকা। সেই সঙ্গে সারাদেশে তা নির্ধারণ করা হয়েছে ৪৫-৪৮ টাকা।

তবে এবার লবণযুক্ত খাসির চামড়ার দাম বাড়ছে না। পবিত্র ঈদুল আজহার দিন বিকেলে শহরের চাষাড়া শহীদ জিয়া হলের সামনে এসে দেখা যায় জেলার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে চামড়া আনা হচ্ছিল। এখানে পাইকাররা ছোট, বড় ও মাঝারি চামড়ার একই রেট বেধে দিয়েছিলেন ৭৫০ থেকে ৮০০ টাকা।

গত বছর (২০২৪) আসন্ন পবিত্র ঈদুল আযহাকে কেন্দ্র করে নারায়ণগঞ্জের পাঁচটি উপজেলা ও সিটি কর্পোরেশন এলাকায় কোরবানির পশুর হাট বসেছিল মোট ৯১টি।  নারায়ণগঞ্জের পাঁচটি উপজেলায় মোট ৭৬টি পশুর হাটের ইজারা দিয়েছিল জেলা প্রশাসন। আরও ১৫ হাটের ইজারা দিয়েছে নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন। পুরো নারায়ণগঞ্জে সব মিলিয়ে এবার হাট বসবে মোট ৯১টি।

গতকাল এ বিষয়ে জানতে চাইলে জেলা প্রশাসনের স্থানীয় সরকারের ভারপ্রাপ্ত উপ-পরিচালক ও এডিসি মো: আলমগীর হুসাইন শীতলক্ষাকে জানান, এখনো পাঁচ উপজেলা থেকে সম্ভাব্য হাটের তালিকা পাঠানো হয়নি। সেই তালিকা আসলে আমরা নিয়মানুযায়ী তদন্ত শেষে অনুমোদন দিব। এরপরই হাটের সংখ্যাটা বলা যাবে। আমরা এবার রাস্তার উপর কোন হাট বসার অনুমতি দিবনা।

এদিকে, নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন ২৬টি কোরবানির পশুর হাটের একটি তালিকা প্রকাশ করেছে।  নারায়ণগঞ্জে ঈদ উল আযহা উপলক্ষে ২৬টি স্থানে কোরবানির পশুর হাট বসানোর প্রস্তাব দিয়েছে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন। ইতিমধ্যে এসকল হাটের ইজারার জন্য আনুষ্ঠানিকতা শুরু করেছে নাসিক।

বৃহস্পতিবার (৮ মে) বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের বাজার কর্মকর্তা জহিরুল ইসলাম। ইতিমধ্যে এসকল হাটের খসড়া তালিকা তৈরি করে নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে পাঠানো হয়েছে বলে জানান নাসিকের এই কর্মকর্তা। জেলা প্রশাসনে বিষয়টি নিষ্পত্তির পর হাটের জন্য ইজারা দেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হবে।  এর আগে গতবছর নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের সদর, বন্দর ও সিদ্ধিরগঞ্জ এলাকায় মোট ১৫টি হাট বসেছিল। এবছর হাটের সংখ্যা বেড়ে ২৬টি স্থানে পশুর হাট বসবে।

আরও পড়ুন