আদালতে ডিভিশন আবেদন গৃহিত, সিদ্ধান্ত পরে
ডাঃ আইভীর জামিন হয়নি
বাংলাবাজার বার্তা ডেস্ক :
প্রকাশ: ২২:৫২, ১২ মে ২০২৫ | আপডেট: ২৩:১৯, ১২ মে ২০২৫

নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র ও জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক জ্যেষ্ঠ সহ-সভাপতি ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভীর জামিন আবেদন নামঞ্জুর করেছেন আদালত। গতকাল সোমবার (১২ মে) দুপুরে নারায়ণগঞ্জ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট দ্বিতীয় আদালতের বিচারক শামসুর রহমানের আদালত জামিন নামঞ্জুর করেন। একই সঙ্গে আসামিপক্ষের আইনজীবীরা ডিভিশনের আবেদন করলে আদালত সেটা আমলে নিয়ে পরে সিদ্ধান্ত দেবেন বলে জানিয়েছেন।
নারায়ণগঞ্জ আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) অ্যাডভোকেট আবুল কালাম আজাদ জাকির বলেন, আইভীকে যে মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে শুধু ওই মামলাতেই জামিন চেয়ে আসামিপক্ষের আইনজীবীরা ম্যাজিস্ট্রেট কোর্টে আবেদন করেন। তখন আদালত জামিন নামঞ্জুর করেন। একই সঙ্গে তারা ডিভিশনের আবেদনও করেন।
আইভী পক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট মাহবুবুর রহমান মাসুম বলেন, সাবেক মেয়র আইভী ছিলেন প্রতিমন্ত্রী পদমর্যাদার। আমরা আদালতে প্রার্থনা করেছি, তাকে যেন ডিভিশন দেওয়া হয়। আদালত নীতিগতভাবে একমত হয়েছেন। জেল কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দেওয়ার কথা বলেছেন আদালত।
আসামিপক্ষের আরেক আইনজীবী সিদ্দিকুর রহমান বলেন, বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে আইভী কখনো মাঠে নামেননি। তার বিরুদ্ধে করা সব মামলা মিথ্যা। এসব ঘটনায় তার কোনো সম্পৃক্ততা নেই। তাকে একটি মামলায় কাস্টডি দিয়েছে। বাকি মামলাগুলো তো তাকে কাস্টডি ইস্যু করেনি। যাতে আমাদের জামিন চাওয়ার ব্যাপারে ব্যত্যয় ঘটছে।
প্রসঙ্গত, গত ৯ মে ভোরে ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভীকে শহরের দেওভোগ এলাকায় তার নিজ বাসভবন চুনকা কুটির থেকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। পরে তাকে সিদ্ধিরগঞ্জ থানায় করা পোশাক কর্মী মিনারুল ইসলাম (৩০) হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে নারায়ণগঞ্জ সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মঈনউদ্দিন কাদিরের আদালতে পাঠালে আদালত তাকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন। পরে আইভীকে গাজীপুরের কাশিমপুর মহিলা কেন্দ্রীয় কারাগারে পাঠানো হয়।
ডাঃ সেলিনা হায়াৎ আইভীর গ্রেফতার নিছক আইনি পদক্ষেপ নয়। এটি একটি স্পষ্ট রাজনৈতিক বার্তা যেখানে সততা, জনভিত্তি ও আত্মমর্যাদাকে আজকের শাসনব্যবস্থা একেবারেই মূল্যহীন মনে করছে। এমন মন্তব্য করেছেন নারায়ণগঞ্জের রাজনৈতিক অঙ্গনের বিশ্লেষকগণ। তাদের মতে, এক দশকের বেশি সময় ধরে নারায়ণগঞ্জ শহরের ‘সিটি মাদার’ বলে পরিচিত আইভী আজ জেলবন্দি। অভিযোগ জুলাইয়ের ছাত্র আন্দোলনের সময় সংঘটিত একটি হত্যা মামলায় তিনি অভিযুক্ত। অথচ তাঁর অতীত পরিচ্ছন্নতা, ন্যায়পরায়ণতা ও সহনশীলতার পক্ষে এক দীর্ঘতম প্রমাণপত্র। তাঁর রাজনৈতিক প্রতিপক্ষরাও প্রায়শই স্বীকার করেছেন আইভী ব্যতিক্রম। তারপরও তাঁকে ‘সাধারণ আসামী’ না ভিআইপি এই বিতর্কে লিপ্ত পুলিশ এবং আদালত।
বিচার চলুক, যদি অপরাধ ঘটে থাকে, বিচারের মুখোমুখি হোন তিনি। কিন্তু রাষ্ট্রকে প্রশ্ন করতেই হবে এই গ্রেফতারের সময়কাল ও পদ্ধতি কি ন্যায়ের, নাকি প্রতিহিংসার? কেন তাঁকে রাতের অন্ধকারে গ্রেফতার করতে হলো, যেখানে তিনি নিজেই বারবার বলে এসেছেন, “আমি বাড়িতেই আছি, পালিয়ে যাব না”?
ডাঃ সেলিনা হায়াৎ আইভী। নামটা উচ্চারণ করলেই দুইটা জিনিস মাথায় আসে প্রতিপক্ষের চোয়ালে হালকা টান এবং মানুষের মুখে আস্থার ছায়া। যাকে আওয়ামী লীগের ভেতরের আওয়ামী লীগ বললে ভুল হয় না। আবার যিনি আওয়ামী লীগের ভেতরের ক্ষমতার বলয়ের বাইরেও ছিলেন সবসময়। তিনি রাজনীতি করেছেন, কিন্তু পলিটিক্স করেননি। এটুকুই তাঁর অপরাধ? এই দেশে ‘অপরাধ’ কখনও কখনও সংজ্ঞায়িত হয় ‘কার পক্ষে আপনি কথা বলেন না’ এর ওপর ভিত্তি করে। ডাঃ আইভীর বিরুদ্ধে মামলা ছয়টি। এর ভেতরে একটি হত্যা মামলা। হাস্যকর বললে কম বলা হয়। একজন চিকিৎসক, একজন জনপ্রতিনিধি, একজন মা এই তিনটি পরিচয় যে নারীর, তিনি কি এমন নির্মম অপরাধে জড়াতে পারেন?
শহরের বোদ্ধামহল ও নাগরিক সমাজ মনে করেন, তবে অপরাধ বড় নয়, তাঁর সততা বড় অপরাধ। কারণ তিনি কোনো ঠিকাদারকে ভাগ দেননি, কোনো কমিশন খাননি, কোনো চাটুকার তৈরি করেননি। নারায়ণগঞ্জে যে রাজনীতি এখন চলছে, সেখানে এসব করাই ‘যোগ্যতার মাপকাঠি’। এই যোগ্যতায় তিনি ফেল করলেন। তাই তাঁকে গ্রেপ্তার করা হলো। গ্রেপ্তার হওয়া একধরনের নাটক।