প্রতিদিন কোটি টাকার ব্যবসায়িক ক্ষতি
ঢাকা-নাঃগঞ্জ পুরাতন সড়কে ধুলা উড়ছে
বাংলাবাজার বার্তা ডেস্ক :
প্রকাশ: ১৩:৫৬, ১৭ জানুয়ারি ২০২৫ | আপডেট: ১৪:০৮, ১৭ জানুয়ারি ২০২৫

ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ পুরাতন সড়ক
ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ পুরাতন সড়ক (শ্যামপুর-পোস্তগোলা) মানেই ধুলা উড়ানো এক অন্ধকারাচ্ছন্ন সড়ক! গত দেড়/দুই বছর বা তারও বেশি সময় ধরে এই সড়কের বেহাল দশা। সড়কের দুরাবস্থার কারণে দেশের ইট, বালু, সিমেন্ট ও রড ব্যবসার অন্যতম বড় পাইকারী মোকাম মুন্সীখোলার ব্যবসায় ধ্বস নেমে এসেছে। নির্মাণ সামগ্রী ব্যবসায়ীদের মতে, প্রতিদিন কোটি টাকার ব্যবসায়িক ক্ষতি হচ্ছে। নির্মাণ সামগ্রী বিক্রি কমে গেছে।
নব্বইয়ের দশকের শেষাবধি পর্যন্ত ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ পুরাতন সড়কটিই ছিল রাজধানী ঢাকার সাথে যোগাযোগের প্রধান পথ। তখনো ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ লিংক রোডটি চালু হয়নি। লিংক রোডটি পুরোদমে চালু হবার পর ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ পুরাতন সড়ক যাত্রীদের কাছে গুরুত্ব হারায়। তবে নির্মাণ সামগ্রীর ব্যবসার জন্য পাগলা-মুন্সীখোলা এলাকা ছিল জমজমাট।
কিন্তু সাম্প্রতিককালে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের কাজ শুরু হওয়ার থেকে এই সড়কের বেহাল দশা কখনোই পুরোদমে মেরামত করা হয়নি। দিনে দিনে সড়কের ক্ষতিগ্রস্ত অংশগুলোতে বর্ষাকালে সৃষ্টগর্ত আরো বড় গর্তে রূপ নিয়েছে। যা এখন শুষ্ক মৌসুমেও এই পথে চলাচলকারী যাত্রী সাধারণকে ভোগাচ্ছে। শুষ্ক মৌসুম ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ পুরাতন সড়কে ধুলার কারণে চলাচল করা যায়না।
নারায়ণগঞ্জ-পোস্তগোলা সড়কের দুরাবস্থা সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য রয়েছে সড়ক বিভাগের কাছে। সেই তথ্য হলো; এই সড়কটি দীর্ঘদিন ধরেই মেরামতের অপেক্ষায় রয়েছে। সড়কটিতে বড় বড় গর্ত আছে। শীতের সময় এই সড়কে ধুলাবালি বেশি হয়। ছোট-বড় যানবাহন চললেই ধুলায় অন্ধকার দেখেন যাত্রী ও পথচারীরা। এই সড়কটি মেরামতের দাবি জানিয়ে এলাকাবাসী মানববন্ধন করেছেন।পাগলা নন্দলালপুর এলাকার বাসিন্দা জিহাদ ইসলাম বলেন, একবার ঢাকার পোস্তগোলা হয়ে নারায়ণগঞ্জ গেলে বোঝা যাবে এই রাস্তা কী বেহাল অবস্থায় পড়ে আছে। বড় বড় খানাখন্দে ভরপুর পোস্তগোলা-শ্যামপুর-পাগলা ও ফতুল্লার রাস্তাঘাট। দেখার কেউ নেই। নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিরা ভোটের পর হাওয়া। পরিস্থিতি এমন দাঁড়িয়েছে যে এসব এলাকা থেকে মতিঝিলে অফিস করাও দুরূহ হয়ে উঠেছে। অবিলম্বে জনস্বার্থে পোস্তগোলা-নারায়ণগঞ্জ রাস্তাটি সংস্কার করা এবং এই এলাকার জলবদ্ধতা নিরসনে ড্রেনেজ সিস্টেম চালু করার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।এদিকে, পোস্তগোলা থেকে নারায়ণগঞ্জ পর্যন্ত সড়ক মেরামতের দাবিতে বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির বাণিজ্যবিষয়ক সম্পাদক ও ঢাকা ৪-৫ আসনের সাবেক এমপি সালাহউদ্দিন আহমেদের নেতৃত্বে মানববন্ধন করেছে এলাকাবাসী। সোমবার (১৩ জানুয়ারি) পোস্তগোলা এলাকায় প্রায় সহস্রাধিক এলাকাবাসী এই মানববন্ধনে অংশ নেন।
এ সময় সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন,রাজধানীর শ্যামপুর কদমতলী এলাকার পোস্তগোলা থেকে নারায়ণগঞ্জ পর্যন্ত সড়কটি দীর্ঘদিন যাবৎ মরণফাঁদে পরিণত হলেও ফ্যাসিস্ট হাসিনার নিশিরাতের ডামি সরকার এই সড়কের কোনো উন্নয়নকাজই করেনি বিগত ১৬ বছরে। ফ্যাসিবাদ হাসিনার পতনের পর অত্র এলাকার দীর্ঘদিনের দাবি পূরণে রাজপথে নেমেছে এলাকাবাসী। তারা দ্রুত সময়ের মধ্যে এই সড়কটি মেরামত দেখতে চায়।
জানাগেছে, পোস্তগোলা সড়ক, দেড় দশকেও হয়নি কোন উন্নয়ন বছরের পর বছর উন্নয়ন না হওয়ায় অযত্ন অবহেলায় বেহাল দশা নারায়ণগঞ্জ-পোস্তগোলা সড়কের। বিভিন্ন স্থানে বড় বড় গর্ত ও খানা-খন্দগুলো মরণ ফাঁদে পরিণত হয়েছে।
স্থানীয়দের অভিযোগ, গত পনের বছর ধরে উন্নয়ন থেকে বঞ্চিত এই সড়কটি। দ্রুত স্থায়ীভাবে সংস্কারের দাবি এলাকাবাসীসহ ভুক্তভোগীদের। তবে সড়কটি ছয় লেনে উন্নীত করার প্রস্তাব প্রণয়নের কথা জানিয়েছেন নারায়ণগঞ্জ সড়ক বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী।
গত বুধবার (১৩ নভেম্বর) সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, রাস্তা জুড়ে পানি আর বড় বড় গর্ত। প্রতিদিন উলটে যাচ্ছে ছোট বড় বিভিন্ন যানবাহন। সড়কটির এই দুরবস্থা নতুন নয়। প্রায় দেড় দশক ধরেই এই অবস্থা বিদ্যমান।
স্থানীয়দের অভিযোগ, নারায়ণগঞ্জ শহরের চাষাঢ়া থেকে ঢাকার পোস্তগোলা পর্যন্ত ১২ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ পুরাতন সড়কটি চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। পাগলা বাজার থেকে পোস্তগোলা পর্যন্ত বড় বড় গর্ত আর পানিতে তলিয়ে থাকায় সীমাহীন ভোগান্তি পোহাচ্ছেন এলাকাবাসীসহ বিভিন্ন পরিবহনের চালক ও যাত্রীরা।
একই অবস্থা বিরাজমান চাষাঢ়া থেকে পঞ্চবটি পর্যন্ত। প্রতি বছর পুরো বর্ষা মৌসুমে বৃষ্টির পানিতে তলিয়ে যায় রাস্তাটির অধিকাংশ এলাকা। বড় বড় গর্ত আর খানখন্দের কারণে যানজট সৃষ্টি হয়ে ঘণ্টার পর ঘণ্টা ভোগান্তি পোহাচ্ছেন যাত্রীরা।
যাত্রীরা আরো অভিযোগ করেন, গর্তে চাকা পড়ে প্রতিদিন যানবাহন উলটে গিয়ে দুর্ঘটনায় আহত হচ্ছেন যাত্রীরা। যন্ত্রাংশ ভেঙে আর্থিক ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন পরিবহন মালিক ও চালকরা। এছাড়া প্রচণ্ড ধুলোবালির কারণে স্বাস্থ্য ঝুঁকিতেও রয়েছেন সড়কে চলাচলকারীরা।
বিগত আওয়ামী সরকারের টানা পনের বছর ক্ষমতাকালীন সময় এই সড়কের হয়নি কোন উন্নয়ন। বেহাল অবস্থার কারণে সড়কটি এখন মরণ ফাঁদে পরিণত হয়েছে। এই সড়ক দিয়ে চলাচল করে প্রতিদিন ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন অন্তত পাঁচ লক্ষাধিক মানুষ।
সড়কটির এই দুরবস্থার কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন ফতুল্লার বিসিক শিল্পনগরীসহ আশপাশের পোশাক কারখানাগুলোর মালিকরা। সড়কটি ঝুঁকিপূর্ণ ও চলাচলের অনুপযোগী হওয়ায় বিদেশি বায়াররা কারখানা পরিদর্শনে আসতে বিমুখ হচ্ছেন। ফলে অর্ডার পাওয়ার ক্ষেত্রে নানা সমস্যায় পড়ছেন পোশাক কারখানাগুলোর মালিকরা। রফতানি খাতের গতি ফেরাতে দ্রুত সড়কটি মেরামতসহ আধুনিকায়ন করার দাবি করছেন তারা।
ফতুল্লার রফতানিমুখী পোশাক কারখানার কয়েকজন পরিচালক বলেন, ‘রাস্তার এই বেহাল অবস্থার কারণে বিদেশি বায়াররা আমাদের ফ্যাক্টরি ভিজিট করতে আসতে চায় না। ফলে কারখানার কর্মপরিবেশ ও উৎপাদনের অবস্থা আমরা তাদের দেখাতে পারি না। তাছাড়া বায়ারদের সঙ্গে ঢাকায় মিট করতে গিয়েও আমরা যানজটের কারণে সময়মতো পৌঁছতে পারি না। তাই বর্তমান অন্তর্র্বতীকালীন সরকারের কাছে আমাদের দাবি, দ্রুত সড়কটি চার বা ছয় লেনে উন্নীত করা হোক। এতে আমাদের রফতানির গতি ফিরে আসবে বলে আমরা মনে করি।
তবে অচিরেই মেরামতের আশ্বাস দিয়ে সড়কটিকে ছয় লেনে উন্নীতকরণ প্রকল্পের প্রস্তাব প্রণয়ন করার কথা জানান নারায়ণগঞ্জ সড়ক বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী শাহানা ফেরদৌস।
ব্যবসায়ীরা বলেন,পোস্তগোলা থেকে চাষাঢ়া পর্যন্ত সড়কটিকে ছয় লেনে উন্নীত করার প্রকল্পের প্রস্তাব প্রণয়ন করা হয়েছে। সড়ক ও জনপথ বিভাগ থেকে পরিকল্পনা কমিশনে প্রস্তাবনা পাঠানো হয়েছে। বর্তমানে পরিস্থিতি যাচাই বাছাই করা হচ্ছে। এছাড়া সড়কটির বিদ্যামান অবস্থা নিরসনে মেরামত কাজের জন্য দরপত্র আহ্বান করা হয়েছে। আশা করছি অচিরেই মেরামত কাজ সম্পন্ন করা হবে।