রাজনীতির এক নতুন পর্ব

নাঃগঞ্জে জামায়াতের মাটি আঁকড়ে এগিয়ে চলা

বাংলাবাজার বার্তা ডেস্ক :

প্রকাশ: ২০:৪১, ৬ মে ২০২৫

নাঃগঞ্জে জামায়াতের মাটি আঁকড়ে এগিয়ে চলা

মে দিবসে যখন দেশের অধিকাংশ রাজনৈতিক দল দ্বন্দ্ব ও বিভক্তির চোরাবালিতে ডুবে ছিল, তখন নারায়ণগঞ্জে জামায়াতে ইসলামীর সুশৃঙ্খল ও সুসংগঠিত সমাবেশ রাজনৈতিক অঙ্গনে এক প্রকার চমক হিসেবেই এসেছে। ‘কচ্ছপের মতো এগিয়ে চলা’— এই তুলনাটি হয়তো খুবই যথার্থ, কারণ যেখানে প্রচারনির্ভর দলগুলো হোঁচট খাচ্ছে, সেখানে জামায়াত যেন ধীর কিন্তু স্থিতিশীল গতিতে মাঠের রাজনীতিতে নিজের অবস্থান সুসংহত করছে।

নারায়ণগঞ্জে জামায়াতের রাজনৈতিক তৎপরতা এখন আর কেবল পোস্টার, মিছিল বা সমাবেশে সীমাবদ্ধ নয়। প্রশাসনের সাথে যোগাযোগ, জাতীয় দিবসগুলিতে নিয়মিত উপস্থিতি এবং শ্রমিকদের কল্যাণে প্রতিশ্রুতি— এসবই দলটির নতুন রাজনৈতিক কৌশলের ইঙ্গিত দেয়। জামায়াত এখন আর কেবল ধর্মীয় পরিচয়ে ভোট চায় না, বরং তারা উন্নয়ন, স্বাস্থ্যসেবা ও নারী নিরাপত্তার মতো জনমুখী ইস্যু নিয়ে মাঠে নামছে।

অন্যদিকে বাম রাজনীতির অবস্থা নারায়ণগঞ্জে এক প্রকার হতাশাজনক। মে দিবসের মতো শ্রমিকদের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দিনে নেতৃত্ব সংকট, পারস্পরিক অভিযোগ আর বিভক্তির ছবি তুলে ধরেছে তাদের সাংগঠনিক দুর্বলতা। হাফিজুল ইসলাম হাফিজ ও মাহবুবুর রহমান ইসমাইলের পারস্পরিক বিষোদগার কেবল ব্যক্তিগত শত্রুতার নয়, বরং এটি বড় পরিসরে বাম রাজনীতির আদর্শচ্যুতিরই প্রতিচ্ছবি। যখন শ্রমিকদের অধিকার রক্ষার বদলে নেতারা ব্যবসা বা রাজনৈতিক সুবিধা হাসিলেই বেশি আগ্রহী হন, তখন জনগণের আস্থা হারানো অস্বাভাবিক নয়।

প্রসঙ্গত, জামায়াতের অগ্রগতি যে সুসংহত এবং ভবিষ্যতমুখী, তা তাদের পাঁচটি সংসদীয় আসনে প্রার্থীদের আগাম ঘোষণা এবং গণসংযোগের মাধ্যমে আরও স্পষ্ট হয়েছে। এই সংগঠিত তৎপরতা অন্যান্য দলগুলোর জন্য একপ্রকার বার্তা— কেবল অতীতকে নিয়ে পড়ে থাকলে ভবিষ্যতের রাজনীতি হাতছাড়া হবে।

তবে প্রশ্ন রয়ে যায়— জামায়াত কি তার অতীতের ‘ছায়া’ থেকে বের হয়ে নতুন ধারার রাজনৈতিক দল হিসেবে জনগণের হৃদয়ে স্থান করে নিতে পারবে? কেবলই কথা নয়, প্রতিশ্রুত হাসপাতাল, নারী নিরাপত্তা ও শ্রমিক কল্যাণ বাস্তবায়নের নির্ভরযোগ্য কর্মপরিকল্পনা ও বাস্তব প্রয়োগ ছাড়া এই অগ্রগতি টেকসই হবে না।

অন্যদিকে, বামপন্থী দলগুলোর জন্য এখনই সময় অন্তর্দ্বন্দ্ব ভুলে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার। না হলে তারা রাজনীতির পাঠ্যপুস্তকে প্রাসঙ্গিকতার জায়গা হারাবেন।

জামায়াত যেভাবে অপ্রচলিত কৌশলে মাঠে ফিরে আসছে, তাতে প্রমাণিত— রাজনীতিতে শূন্যস্থান থাকে না। কেউ না কেউ সেই শূন্যস্থান পূরণ করবেই। আর সে জায়গা যদি গণমানুষের চাহিদা ও সেবার ভিত্তিতে দখল করে নেয়া যায়, তবে সে দলের উত্থান ঠেকানো কঠিন।

আরও পড়ুন