নাঃগঞ্জে রাজনীতিতে জামায়াত এগিয়ে

বাংলাবাজার বার্তা ডেস্ক :

প্রকাশ: ০০:১৯, ৫ মে ২০২৫

নাঃগঞ্জে রাজনীতিতে জামায়াত এগিয়ে

প্রাচ্যেরডান্ডি নারায়ণগঞ্জের শ্রমিক রাজনীতিতেও এগিয়ে রয়েছে জামায়াত।  মে দিবসে যেখানে অন্যান্য রাজনৈতিক দলগুলো দ্বন্দ্বে লিপ্ত ছিল-সেখানে জামায়াত সর্ববৃহৎ নারায়ণগঞ্জে সর্ববৃহৎ ও সুশৃঙ্খল সমাবেশ করেছে। নারায়ণগঞ্জ জামায়াত নেতৃবৃন্দের সফল সমাবেশ দেখে রাজনৈতিক অঙ্গনের বিশ্লেষকরা বলছেন, জামায়াতে ইসলামী কচ্ছপ গতিতে এগিয়ে যাচ্ছে। তারা অলস খরগোশদের হারিয়ে টপে পৌঁছে যাবে। ডানপন্থি ও বামপন্থি দলগুলোর ভিড়ে জামায়াত নতুন ব্রান্ড হয়ে এগিয়ে চলেছে। দলটি ইতিপূবেই জেলার পাঁচটি সংসদীয় আসনে নির্বাচনের প্রস্তুতী নিয়ে প্রকাশ করেছে প্রার্থীদের নাম। সে সকল সম্ভাব্য প্রার্থীরা নিজ নিজ নির্বাচনী এলাকায় গণসংযোগ শুরু করেছে পুরোদমে।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকগণ আরো বলেন, নারায়ণগঞ্জ জামায়াত নেতৃবৃন্দ প্রশাসনের সাথে সারাক্ষণ যোগাযোগ রাখছেন। সরকারি বিভিন্ন কর্মকান্ডে তাদের অংশগ্রহণ দেখা যায় সবার আগে। অথচ তাঁরা প্রচার বিমুখ। নিজেদের কর্মকান্ডের প্রচারণা নিয়ে তাদের মধ্যে কোন বাড়াবাড়ি নেই। তাঁরা ধীরে সুস্থে জনগণের সাথে মিশে তাদের মনের যায়গা করে নিতে চাইছেন। জনগণের মধ্যে জামায়াত সম্পর্কে আগের ভুল ধারণা অনেকটাই কাটতে শুরু করেছে। এখন মাঠে জামায়াতের বিরুদ্ধে বলার কেউ নেই। ফ্যাসিস্ট আওয়ামীলীগ নিজেরই অস্তিত্ব খুঁজে ফিরছে। প্রতিটি জাতীয় দিবসে নারায়ণগঞ্জ জামায়াত যথাযথ ভূমিকা পালন করে যাচ্ছে।

মহান মে দিবসে বিশাল সমাবেশের আয়োজন করে নারায়ণগঞ্জ জামায়াত। শ্রমিকদের জন্য নারায়ণগঞ্জে একটি হাসপাতাল করার প্রতিশ্রুতী দিলেন জামায়াত নেতৃবৃন্দ। বৃহস্পতিবার ( ১ মে ) বিকাল ৪টায় অনুষ্ঠিত এই সমাবেশে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও নারায়ণগঞ্জ মহানগরীর আমীর মাওলানা আবদুল জব্বার। সিদ্ধিরগঞ্জ উত্তর থানা শাখার আমির মাওলানা মোস্থফা কামালের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সমাবেশে আরও উপস্থিত ছিলেন নারায়ণগঞ্জ মহানগরীর সেক্রেটারি ইঞ্জিনিয়ার মনোয়ার হোসাইন ও সহকারী সেক্রেটারি মোহাম্মদ জামাল হোসাইন।

সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে মাওলানা আবদুল জব্বার মহান মে দিবসের তাৎপর্য তুলে ধরেন। তিনি ১৮৮৬ সালের শিকাগোর শ্রমিকদের আত্মত্যাগের কথা স্মরণ করে বলেন, “আজকের এ দিনে শ্রমের উপযুক্ত মূল্য ও দৈনিক ৮ ঘন্টা কাজের দাবিতে সংগ্রামের সূচনা হয়েছিলো। শোষণ ও নির্যাতন হতে মেহনতি মানুষের মুক্তি, তাদের ন্যায্য অধিকার আদায় এবং সামাজিক সুরক্ষা সুনিশ্চিত করতে বর্তমানে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী বদ্ধ পরিকর।”

উক্ত সমাবেশে অন্যান্যদের মধ্যে আরও বক্তব্য রাখেন মজলিশে শূরা সদস্য ইঞ্জিনিয়ার আব্দুল বাকি, থানা কর্মপরিষদ সদস্য কামরুজ্জামান রিংকু, থানা সেক্রেটারি কামরুল ইসলাম রিপন, ওয়ার্ড সভাপতি আব্দুল খালেক, রমজান আলি খান, নাছির উল্লাহ প্রধান, নাছির উদ্দিন, রাকিব, ইব্রাহিম খলিল, সাইদুল হক, শহিদুল ইসলাম ও শাহনেওয়াজ দিপু প্রমুখ।

মাওলানা আবদুল জব্বার নারায়ণগঞ্জ মহানগরী কর্তৃক মেহনতি মানুষের জন্য গৃহীত বিভিন্ন কর্মসূচির কথা উল্লেখ করে বলেন, “জামায়াত ইসলামী ক্ষমতায় এলে এ সব মেহনতি মানুষের জন্য নারায়নগঞ্জে একটি হাসপাতাল করা হবে। যেখানে শুধেু শ্রমিক ও অসহায় মানুষদের বিনামূল্যে চিকিৎসা দেওয়া হবে। নারী শ্রমীকদের জন্যও বিশেষ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। বিশেষ করে গার্মেন্স নারী কর্মীদের নিরাপত্তার জন্য ব্যবস্থা নেওয়া হবে। বর্তমানে গার্মেন্স নারী কর্মীদের নিরাপত্তার তেমন সুব্যবস্থা নাই। আমরা ক্ষমতায় গেলে এ সব নারী কর্মীদের নিরাপত্তার সুব্যবস্থ নিশ্চিত করব।”

বিগত সরকারের সমালোচনা করে মাওলানা আবদুল জব্বার বলেন, আপনারা জানেন বিগত ফ্যাসিস্ট হাসিনা সরকারের সময় আমরা আপনাদের কাছে কোনো সামাজিক কাজ নিয়ে আসতে পারিনি। এমন কি মসজিদের ইমাম পর্যন্ত কথা বলতে পারে নাই। কিন্তু এখন সময় এসেছে। ছাত্র জনতার আন্দোলনের মুখে ফ্যসিস্ট হাসিনা পালিয়ে গেছে। তাই দল মত নির্বিশেষে এক হয়ে দেশ ও জাতির জন্য একযোগে কাজ করতে হবে। দেশ পুনর্গঠনে সকলকে এক্যবদ্ধ থেকে কাজ করে যেতে হবে।”

এদিকে, এবার বামদলগুলো মহান মে দিবসকে সামনে রেখে নিজেদের মধ্যে কাঁদা ছোড়াছুড়ি করেছে। নারায়ণগঞ্জ জেলা কমিউনিস্ট পার্টির সভাপতি হাফিজুল ইসলামের চরিত্রের ভিন্ন এক অজানা অধ্যায় এবার নারায়ণগঞ্জবাসীর সামনে তুলে ধরলো আরেক গ্রুপ। বাসদ নেতারা নারায়ণগঞ্জ প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে কমিউনিস্ট নেতা হাফিজুলের বিরুদ্ধে অভিযোগের ফিরিস্তি তুলে ধরেন। প্রধান প্রধান অভিযোগ ছিল-হাফিজুল আওয়ামীলীগের এমপি শামীম ওসমানের দোসর। ওই সূত্রে সে শ্রমিক নেতা হয়েও ফকিরা গার্মেন্টস এর ঝুট ব্যবসা করে। প্রভাবশালী শিল্পপতিদের পাথর সাপ্লায়ার। অর্থাৎ হাফিজুল নিখাদ শ্রমিক নেতা নয়। তিনি একজন ঝুট ব্যবসায়ী হয়ে উঠেছেন। তিনি আর শ্রমিকদের স্বার্থ সংরক্ষণ করেন না। যা করেন তা স্রেফ অভিনয়।

এদিকে, হাফিজুল ইসলামের পক্ষ থেকেও গণমাধ্যমে বাসদ নেতা এড. মাহাবুবুর রহমান ইসমাইলের বিরুদ্ধে বক্তব্য প্রকাশিত হয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে, আন্তর্জাতিক শ্রমিক দিবস ‘পহেলা মে’ উদযাপনকে ঘিরে চাষাড়া শহীদ মিনারে একাধিক শ্রমিক সংগঠনের সভা-সমাবেশ আহ্বানকে কেন্দ্র করে বাংলাদেশ ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্র (টিইউসি)'র কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য এবং কমিউনিস্ট পার্টি নারায়ণগঞ্জ জেলা শাখার সভাপতি শ্রমিক নেতা হাফিজুল ইসলাম হাফিজের বিরুদ্ধে টেক্সটাইল গার্মেন্টস শ্রমিক ফেডারেশন মিথ্যা ও ভিত্তিহীন অভিযোগ তুলে সংবাদ সম্মেলন করেছে বলে দাবি করেছে বাংলাদেশ ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্র (টিইউসি)। তারা একে সম্পূর্ণ উদ্দেশ্যপ্রণোদিত, অপপ্রচারমূলক এবং সম্মানহানিকর বলে উল্লেখ করে প্রতিবাদ জানিয়েছে।

টিইউসি’র জেলা কমিটির পক্ষ থেকে এক বিবৃতিতে জানানো হয়, গত ২৯ এপ্রিল (মঙ্গলবার) ফেডারেশনের নেতা মাহবুবুর রহমান ইসমাইল সংবাদ সম্মেলন করে অপপ্রচারে লিপ্ত হন। তাঁর এই আচরণকে হাফিজুল ইসলাম হাফিজের সুনাম ও মর্যাদা ক্ষুণ্ন করার হীন চেষ্টা হিসেবে আখ্যায়িত করেছে টিইউসি।

 

আরও পড়ুন