আদালতপাড়ায় সাবেক আইনমন্ত্রী লাঞ্ছিত
নাঃগঞ্জে এমন ঘটনা ভাল নজীর নয়
বাংলাবাজার বার্তা ডেস্ক :
প্রকাশ: ০০:৪৪, ৩০ এপ্রিল ২০২৫

নারায়ণগঞ্জে আদালতপাড়ায় সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হক লাঞ্ছিত হওয়ার ঘটনায় সুধীমহল হতাশা ব্যক্ত করেছে। তাঁরা বলছেন, এটা ভালো নজীর নয়। নারায়ণগঞ্জে আদালতপাড়ায় আসামী লাঞ্ছিত হওয়ার ঘটনা যদিও নতুন কিছু নয়-তবুও তা ভালো দেখায় না। ইতিপুর্বে খোদ আইনজীবীরাই আন্দোলনরত আইনজীবীদের লাঞ্ছিত করেছেন। সেই সময়কালটা ছিল অবশ্য ফ্যাসিস্ট সরকারের আমলে। তৎকালীন আইনজীবীদের নেতা মহসীন গংরা নয়নদের লাঞ্ছিত করেছিলেন। আজকের দিনে মহসিন গংরা সেই দশায় গিয়ে ঠেকেছেন। তার মানে এই বাজে প্রাকটিসটা এড়িয়ে চলাই শ্রেয়।
এর আগে গাজীপুরে আসামী ছিনতাই ও লাঞ্ছিত হওয়ার ঘটনার খবর দেখে সকলেই দুঃখ প্রকাশ করেছে। সোমবার (২৮ এপ্রিল) পৌনে তিনটার দিকে নারায়ণগঞ্জে আদালতের এজলাসের প্রবেশমুখে বিক্ষুব্ধ জনতা ও বিএনপিপন্থী আইনজীবীদের মারধরের শিকার হয়েছেন সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হক। এর আগে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে নিহত হাফেজ সোলাইমান হত্যা মামলায় রিমাণ্ড শুনানির জন্য নারায়ণগঞ্জের সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মঈনুদ্দিন কাদিরের আদালতে তোলা হয় তাকে বলে জানান আদালত পুলিশের পরিদর্শক মো. কাইউম খান।
তিনি বলেন, হত্যা মামলাটিতে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য সাতদিনের রিমাণ্ড আবেদন করে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। শুনানি শেষে আদালত চারদিনের রিমাণ্ড আবেদন মঞ্জুর করেন।
ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী একাধিক গণমাধ্যমকর্মী বলেন, দুপুরে আদালতে তোলার সময় বাইরে বিএনপন্থী আইনজীবীরা ‘আনিসুল হকের ফাঁসি’ চেয়ে স্লোগান দেন। শুনানি শেষে এজলাস থেকে বের হওয়ার সময় প্রবেশমুখে তাকে চর-থাপ্পর দেন বিক্ষুব্ধ জনতা ও বিএনপিপন্থী আইনজীবীরা।
এই সময় আনিসুল হকের মাথায় পুলিশের হেলমেট ছিল। বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি দেখে নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা পুলিশ সদস্যরা সাবেক এ আইনমন্ত্রীকে নিয়ে দৌঁড়ে আদালতের বারান্দা ত্যাগ করেন এবং একইভাবে তাকে দ্রুততার সাথে প্রিজন ভ্যানে তোলা হয়।
গণমাধ্যমকর্মীদের ধারণ করা ভিডিওতেও এজলাসের প্রবেশমুখে আনিসুল হককে চর-থাপ্পর দিতে দেখা যায়।
প্রিজন ভ্যানে থাকা অবস্থায়ও বাইরে আদালত প্রাঙ্গণে ‘ফাঁসি চাই, ফাঁসি চাই, আনিসুল হকের ফাঁসি চাই’ বলে স্লোগন দিতে থাকেন বিএনপিপন্থী আইনজীবীরা।
শুনানির আগে ও পরে বিএনপির মিছিলে মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট সাখাওয়াত হোসেন খান, জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি ও জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের সাবেক সভাপতি সরকার হুমায়ূন কবির ও আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক আনোয়ার প্রধানকে নেতৃত্ব দিতে দেখা যায় বলেও জানান প্রত্যক্ষদর্শীরা।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে জেলা আদালত পুলিশের পরিদর্শক কাইউম খান বলেন, এজলাস থেকে বের হওয়ার পর বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি হয়, পরে পুলিশ দ্রুততার সাথে আসামিকে প্রিজন ভ্যানে তোলে। কিন্তু সেখানে কেউ চর-থাপ্পর দিয়েছে এমনটা আমার নজরে পড়েনি।
যোগাযোগ করা হলে ‘আনিসুল হককে উৎসুক জনগণ মারধর করেছে’ বলে জানিয়ে এতে বিএনপন্থী আইনজীবীদের কোনো সম্পৃক্ততা নেই বলে দাবি করেন জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি সরকার হুমায়ূন কবির।
তিনি আরও বলেন, ফাঁসির দাবিতে মিছিল করছি আমরা কিন্তু চর-থাপ্পর দিছে জনগণ। আইনজীবীরা কেন মারবে, তাদের প্রতি মানুষের ক্ষোভ আছে, সেই ক্ষোভ থেকে জনগণ তাকে মারধর করেছে।
গত ২৬ ফেব্রুয়ারী গাজীপুরের রাজবাড়ী এলাকায় জেলা জজ আদালত চত্বরে জামিন পাওয়া দুই আসামিকে মারধর করে অপহরণের চেষ্টা চালিয়েছে বাদীপক্ষ। এ সময় নারী-পুরুষসহ ১৩ আসামিকে বেধড়ক মারধর ও কুপিয়ে আহত করা হয়। এতে আইনজীবী ও বিচারপ্রার্থীদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। পরে উপস্থিত আইনজীবী ও জনতা পদক্ষেপ নিয়ে দুজনকে উদ্ধার করলে বাদীপক্ষ পালিয়ে যায়। সেদিন বুধবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে আদালতের পশ্চিম পাশে আইনজীবী সমিতির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের কার্যালয়ের সামনে এ ঘটনা ঘটে।
ভুক্তভোগী দুই জামিনপ্রাপ্ত আসামি হলেন- গাজীপুরের শ্রীপুর থানার তেলিহাটি এলাকার আব্দুল মালেকের ছেলে মিলন মিয়া (৩৫) ও বাবুল মিয়া (৪০)।
গাজীপুর আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক সিরাজুল ইসলাম এবং জিএমপি সদর মেট্রো থানার ওসি মেহেদী হাসান এ ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন। এ ঘটনায় মামলার বাদী এসএম নাজমুল হক অপহরণ ও আক্রমণের নেতৃত্ব দিয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। তিনি শ্রীপুর উপজেলার তেলিহাটি এলাকার শহীদুল্লাহর ছেলে। মামলার অপর আসামি এনামুল হক জানান, তাদের বিরুদ্ধে বাদী নাজমুল হক জমিসংক্রান্ত মামলা করেছিলেন। আদালতে আত্মসমর্পণের পর জামিন পাওয়ার পরপরই সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা হামলা চালায়।
তিনি বলেন, আমরা আদালত থেকে বের হওয়ার সময় বাদী ও তার সঙ্গে থাকা কয়েকজন দা, চাকু, লাঠিসহ দেশীয় অস্ত্র নিয়ে আমাদের পথরোধ করে। আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদককে জানালে তিনি আমাদের আনতে দুই কর্মচারী পাঠান; কিন্তু তাদের সামনেই আমাদের ওপর হামলা চালানো হয়।
গাজীপুর আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক সিরাজুল ইসলাম জানান, জামিনের পরপরই আসামিরা বাদীপক্ষের অস্ত্রধারীদের দেখে ভয় পেয়ে বিষয়টি তাকে জানান।
তিনি বলেন, আমি তাদের নিরাপদে নিয়ে আসতে কর্মচারী পাঠাই; কিন্তু আদালত চত্বরে বাদীপক্ষ তাদের ওপর হামলা চালায়। এতে আইনজীবী সমিতির দুই কর্মচারীও গুরুতর আহত হন। কর্মচারী আইয়ুব আলীর মাথায় সাতটি সেলাই দিতে হয়েছে।