আজ মহান মে দিবস, নাঃগঞ্জের শ্রমিকরা দুর্দশায়
বাংলাবাজার বার্তা ডেস্ক :
প্রকাশ: ২৩:৪৮, ৩০ এপ্রিল ২০২৫ | আপডেট: ২৩:৫১, ৩০ এপ্রিল ২০২৫

আজ মহান মে দিবস। শ্রমজীবি মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠার দিন। কিন্তু প্রাচ্যেরডান্ডি ও শিল্পনগরী নারায়ণগঞ্জের শ্রমিক রাজনীতিতে ভেসে বেড়াচ্ছে অনৈক্য ও স্বার্থবাদীতার বিঁষবাষ্প। দু’ভাগে বিভক্ত শ্রমিক নেতারা চাষাড়া কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে সমাবেশকে কেন্দ্র করে শেষ পর্যন্ত কি দুর্বৃত্তদের পন্থা অবলম্বন করবে ? সকালের গ্রুপ কি বিকালের গ্রুপের উপর হামলা চালাবে-নাকি ভিন্ন কোন চাণক্য কৌশলে সমাবেশ পন্ড করে দিবে?
শ্রমিক নেতারা দ্বিধা বিভক্ত। বিভিন্ন শিল্পকারখানার মালিকদের অনেকেই লাপাত্তা। ফলে নারায়ণগঞ্জ শিল্পাঞ্চলের শ্রমিকরা দুর্দশায় দিন কাটাচ্ছে। বেতন-ভাতার দাবিতে মাসে অন্তত একবার হলেও রাস্তায় নামছে। সবচেয়ে বেশি সমস্যা হচ্ছে ফতুল্লা, সিদ্ধিরগঞ্জ, কাঁচপুর, রূপগঞ্জ ও আড়াইহাজার এলাকায়। দেখাগেছে, ঈদের বেতন বোনাস না পরিশোধ করেই অনেক মালিক ঈদের ছুটি দিয়ে গার্মেন্টস আর খোলেননি। ঈদের পরে শ্রমিকরা আন্দোলনে যেতে বাধ্য হয়েছে।
এদিকে, শ্রমিক নেতারা নিজেরা দ্বন্দ্বে জড়িয়ে পড়েছেন। তারা শ্রমিকদের স্বার্থ বাদ দিয়ে নিজেদের স্বার্থ আদায়ে ব্যস্ত সময় পার করছেন। বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনের পর থেকে শ্রমিক নেতাদের একটি বৃহৎ অংশ রাতারাতি বদলে গেছেন। ফ্যাসিস্ট সরকারের কিছু প্রভাবশালী শিল্পপতি শ্রমিক নেতাদের ব্যবহার করে পরিবর্তিত রাজনৈতিক পরিবেশে টিকে থাকার চেষ্টা করছেন। শ্রমিক নেতারা নিজেরাই এখন সারাক্ষণ ওই সকল মালিকদের সাথে যোগাযোগ রক্ষা করেন। আর শোষিত ও বঞ্চিত শ্রমজীবী মানুষগুলো রাস্তায় আন্দোলন করে মরছে।
জানাগেছে, আড়াইহাজারে চার দফা দাবিতে স্থানীয় পাওয়ারলুম শ্রমিকেরা সড়ক অবরোধ করে। প্রথমে স্থানীয় রামচন্দ্রী এলাকা থেকে গোপালদী বাজার পর্যন্ত রাস্তায় গাছের গুঁড়ি ও ইট সহ বিভিন্ন ভারী বস্তুু ফেলে সড়কে যানচলাচল বন্ধ করে দেয়া হয়। খবর পেয়ে আড়াইহাজার উপজেলা নির্বাহী অফিসার সাজ্জাত হোসেন ও আড়াইহাজার থানার ওসি তদন্ত সাইফ উদ্দিন ঘটনাস্থলে গিয়ে শ্রমিকদের শান্ত করার চেষ্টা করেন। এক পর্যায়ে বিক্ষুদ্ধ শ্রমিকরা রামচন্দ্রী স্ট্যান্ড এলাকায় অবস্থান নিলে পরে বিশনন্দী ফেরিঘাট সড়কেও যানচলাচল বন্ধ হয়ে যায়।
মঙ্গলবার (২৯ এপ্রিল) দুপুর ১টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত শ্রমিকরা সড়কে বসে বিক্ষোভ করতে থাকেন। এসময় শত শত যানবহন সড়কে আটকা পড়ে। স্থানীয় বিভিন্ন টেক্সাইল মিলের প্রায় ২ হাজারের মতো শ্রমিক অবরোধে অংশ নেয়। এসময় অপ্রীতিকর পরিস্থিতি এড়াতে ঘটনাস্থলে বিপুল সংখ্যক আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য মোতায়েন করা হয়।
এক পার্যায়ে প্রশাসনের পক্ষ থেকে মাইকে সড়ক ছেড়ে দেওয়ার অনুরোধ করা হলে শ্রমিকরা চলে যায়। স্থানীয় ‘আবুল খায়ের টেক্সাইল’ মিলের শ্রমিক কবির হোসেন বলেন, আমরা টেক্সাইল মিলের মালিকদের কাছে চারটি দাবী করেছি; দাবীর মধ্যে রয়েছে, গজ প্রতি গ্রেরে কাপড়ে এক টাকা, শ্রমিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত, শ্রমিকদের স্বাস্থ্য সুরক্ষা এবং কোন দুর্ঘটনা ঘটলে মালিক পক্ষ আর্থিক সহযোগিতা ও দুই ঈদে বোনাস ভাতা চালু করতে হবে।
তিনি বলেন, এই দাবীগুলো আমাদের দীর্ঘদিনের। এটি মালিকদের পক্ষে পূরণ করা সম্ভব। শ্রমিক বিল্লাল হোসেন বলেন, আমাদের কর্মস্থলে কোন নিরাপত্তা নেই। প্রতিষ্ঠানের ভিতরে কর্মরত অবস্থায় কোন দুর্ঘটনা ঘটলে আমাদের নিজেদের অর্থে চিকিৎসা করতে হয়। অনেক শ্রমিক বিনা চিকিৎসায় কষ্ট করে।
শ্রমিক নাহিদ বলেন, দুই ঈদে আমাদের বোনাসের দাবী করা হয়েছে। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান তাদের শ্রমিকদের বোনাস দিয়ে থাকে; আমরা কেন তা পাবোনা।
আড়াইহাজার থানার ওসি (তদন্ত) সাইফদ্দিন বলেন, ‘শ্রমিকদের পক্ষ থেকে চারটি দাবি করা হয়েছে। মালিকদের সাথে আলোচনা করে শ্রমিকদের দাবিগুলো ধাপে ধাপে পূরণ করার আশ্বাস দিলে তারা অবরোধ ছেড়ে চলে যায়। বর্তমানে সড়কে যানবাহন চলাচল করছে।’
পর্যবেক্ষক মহলের মতে, নেতারা শ্রমিকদের স্বার্থে জোরালোভাবে কাজ করছেনা। শ্রমিক নেতাদের অনেকেই ৫ আগস্টের কিছু গার্মেন্টস মালিককে শেল্টার দিয়ে নিজেরাই হালুয়া-রুটি ভাগাভাগিতে ব্যস্ত। শ্রমিক নেতাদের মধ্যে ফাটল ধরিয়ে দিয়েছে ফ্যাসিস্ট সরকারের পলাতক কতিপয় প্রভাবশালী গার্মেন্টস মালিক। যার দরুন নারায়ণগঞ্জের শ্রমিক নেতারা কয়েক ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়েছে।