বৃষ্টিতে নাঃগঞ্জ মহানগরী অচল !

বাংলাবাজার বার্তা ডেস্ক :

প্রকাশ: ২৩:৩৮, ২০ মে ২০২৫ | আপডেট: ০০:২৮, ২২ মে ২০২৫

বৃষ্টিতে নাঃগঞ্জ মহানগরী অচল !

মঙ্গলবার (২০ মে) বিকেলের ভারী বর্ষণে তলিয়ে গেল নারায়ণগঞ্জ মহানগরী। প্রধান সড়ক বিবি রোডে হাঁটু পানি। কোথাও তারও বেশি। ভারী বর্ষণ চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিল নাসিক এর ড্রেন সংস্কার কাজের খেসারত কিভাবে নগরবাসী দিচ্ছেন। শহরময় ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা ড্রেন সংস্কার কাজের ইট, বালু ও সুরকি বৃষ্টির পানির সাথে ড্রেনে গিয়েই জমছে। ড্রেন জ্যাম করে দিয়েছে। ফুটপাত, প্রধান সড়ক, ড্রেন পানিতে একাকার। সেই পানিতে ভেসে বেড়াচ্ছে পলিথিন ও প্লাস্টিকের বোতল।

ভারী বর্ষনের পর নারায়ণগঞ্জ মহানগরী জলাবদ্ধতার কারণে কারযত অচল হয়ে পড়ে। প্রধান সড়কে পানি। অলিগলিতে পানি। জলাবদ্ধতার পানি টপকে যেতে না পেরে বিভিন্ন যানবাহন থেমে যায়। কারো ইঞ্জিন বিগড়ে যায়। বিশেষ করে অবৈধ অটোগুলো বিগড়ে যায়। কারো চার্জ শেষ। কারো মোটরে পানি ঢুকে শর্টসার্কিট। নিচু সিএনজিগুলোর স্টার্ট বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। শহরময় জলাবদ্ধতা ও এ সকল  ছোট খাটো যানবাহনের কারণে সৃষ্টি হয় বিরাট যানজট। পুরো শহর থমকে দাঁড়ায় অন্তত দেড় থেকে দু’ ঘন্টার জন্য।

পথে পথে বৃষ্টিভেজা মানুষের দুর্ভোগ ছিল অবর্ণনীয়। শহরের বিভিন্ন মহল্লাও জলাবদ্ধতায় পানি বন্দি হয়ে পড়েছিল মানুষজন। কেউ কোথাও যেতে বা গন্তব্য থেকে বাসায় ফিরতে পারছিলনা। রাস্তায় কোন অটোরিক্সা বা পায়ে চালিত রিক্সাও পাওয়া যাচ্ছিলনা। আজকাল পায়ে চালিত রিক্সাগুলোকেও মোটরচালিত করা হয়েছে। মানুষ ঘরে ফিরতে কোন যানবাহন না পেয়ে পানি মাড়িয়ে চলতে শুরু করে। শহরের চাষাড়া, খানপুর, গলাচিপা, কলেজরোড, দেওভোগ পাক্কা রোড, ভূঁইয়ারবাগ, লিচুবাগ, জিউসপুকুরপাড়, কালিরবাজার, আমলাপাড়া, নিতাইগঞ্জ ও পাইকপাড়া এলাকার মানুষ পানি বন্দি হয়ে পড়েন।

কয়েকজন সিনিয়র গণমাধ্যমকর্মী জানান, সামান্য বৃষ্টিতেই হাঁটু সমান পানিতে তলিয়ে যায় নারায়ণগঞ্জ শহরের প্রধান সড়ক বি বি রোড। পানিতে ডুবে যায় পথচারিদের চলাচলের ফুটপাতও। জলাবদ্ধতার পরিস্থিতি হয় বন্যার মতো। এর সাথে ড্রেনের তরল বর্জ্য বের হয়ে রাস্তায় জমে থাকা পানির সাথে মিশে একাকার হয়ে যায়। ফলে দুর্গন্ধ ছড়িয়ে পরিবেশ দূষণসহ মানুষের চলাচলে চরম ভোগান্তি সৃষ্টি হয়।

নারায়ণগঞ্জ শহরে ড্রেনেজ অব্যবস্থাপনার কারণে গত দুই দশকের বেশি সময় ধরে নানা ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন নগরবাসি। নগরীর ড্রেনগুলো ভরাট হয়ে যাওয়ায় সামান্য বৃষ্টি হলেই রাস্তাঘাট পানিতে তলিয়ে যায়। কৃত্রিম জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয় নগরির প্রধান সড়কে। জলাবদ্ধতা নিরসনে সিটি কর্পোরেশন কর্তৃপক্ষ সুয়ারেজ ও ড্রেন সংস্কারের কাজ শুরু করলেও তা ধীর গতিতে চলছে বলে অভিযোগ নগরবাসির। তবে চলতি বছরেই এই জনভোগান্তি দূর করার আশ্বাস দিয়েছেন সিটি কর্পোরেশনর প্রশাসক।

নগরির দীর্ঘদিনের এই জলাবদ্ধতা ও জনদূর্ভোগ স্থায়ীভাবে নিরসন করতে ইতিমধ্যে নতুন প্রকল্পসহ নানা উদ্যাগ গ্রহণের কথা জানিয়েছে সিটি কর্পোরেশন কর্তৃপক্ষ। বি বি রোডের দুই পাশে পুরনো ড্রেনের সংস্কারসহ নতুন করে সুয়ারেজ লাইন নির্মাণের কাজ চলছে। সাড়ে আট কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের ও চার ফুট প্রস্থ্যের ড্রেনটির গভীরতা হবে আগের চেয়েও প্রায় দ্বিগুণ। কাজটি শেষ হলে ড্রেনের বর্জ্য দ্রুত নিষ্কাশণের পাশাপাশি রাস্তায় আর জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হবে না বলে দাবি সংশ্লিষ্টদের।

তবে কাজটি ধীর গতিতে চলছে বলে অভিযোগ নগরবাসীর। বর্ষা মৌসুমের আগেই শেষ করার দাবি করছেন ভুক্তভোগি বাসিন্দারা। ড্রেন সংস্কারের কাজটি আগামি বছরের ফেব্রুয়ারিতে শেষ করার সময়সীমা থাকলেও চলতি বছরের মধ্যেই এটি বাস্তবায়নের আশ্বাস দিয়েছেন নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের প্রশাসক এ এইচ এম কামরুজ্জামান।

তিনি বলেন, ‘প্রায় ৩৯ কোটি ব্যয়ে পুরনো ড্রেন সংস্কার করে সাড়ে সাত কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের ও চার ফুট প্রস্থ্যের ড্রেন নির্মান করা হচ্ছে। এর গভীরতাও হবে আগের চেয়ে দ্বিগুণ। আমরা আশা করি ড্রেনটির নির্মাণ কাজ শেষ হলে জলাবদ্ধতার ভোগান্তি স্থায়ীভাবে দূর হবে। আগামি পঞ্চাশ বছরেও আর ড্রেনের কাজ করতে হবে না।’

নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের প্রশাসক এ এইচ এম কামরুজ্জামান গণমাধ্যমকে  আরও বলেন, ‘২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারি মাসের মধ্যে প্রকল্পের কাজটি শেষ করার সময়সীমা রয়েছে। তবে আমরা চেষ্টা করছি যাতে এই বছরের মধ্যেই শেষ করা যায়। এজন্য আমরা একটা ওয়ার্ক প্ল্যান তৈরি করেছি। এই ওয়ার্ক প্ল্যানের আওতায় অভ্যন্তরীণ ড্রেনগুলো পরিস্কার করে দিব। যাতে ড্রেনের জমে থাকা বর্জ্য খুব সহজে নিষ্কাশন হতে পারে। সামনে বর্ষা মৌসুমে যে জলাবদ্ধতার আশংকা রয়েছে সেটা আর হবে না। আগামি ফেব্রুয়ারির মধ্যে সময়সীমা থাকলেও চেষ্টা করছি ডিসেম্বরের মধ্যেই শেষ করতে। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে নারায়ণগঞ্জবাসি শহরের দীর্ঘদিনের জলাবদ্ধতা থেকে রেহাই পাবে। এর স্থায়ী সমাধান হবে।’

সম্পর্কিত বিষয়:

আরও পড়ুন