"আধুনিক মহাযানজট মোক্ষপীঠ"

বাংলাবাজার বার্তা ডেস্ক :

প্রকাশ: ০১:১১, ৮ মে ২০২৫

নারায়ণগঞ্জ শহরের অটো নামক যান্ত্রিক জন্তুর বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষিত হয়েছে। সভা বসেছে, চা-কফির কাপে ঝড় উঠেছে, সবাই মিলে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন — “অটো চলবে না।” শুনতে ভালো লাগে, যেন কোনো সিনেমার ক্লাইম্যাক্স মুহূর্তে এসে শহরের হিরোরা সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, এবার ভিলেনের বিরুদ্ধে দাঁড়াতেই হবে।

কিন্তু এই ভিলেন অটো নয়, ভিলেন আসলে আমাদের শহর পরিকল্পনার অব্যবস্থা, প্রশাসনিক ঢিলেমি আর নাগরিকদের স্বার্থপর আচরণ — যা দিনের পর দিন একেকটি রাস্তা, একেকটি মোড়কে করে তুলেছে একেকটি "আধুনিক মহাযানজট মোক্ষপীঠ"।

রাস্তায় এখন অটো চলে না, অটো ভেসে বেড়ায় — গায়ে লেখা “ফিটনেস নেই, লাইসেন্স নেই, কিন্তু সাহস আছে!” কে না জানে, অটোর পেছনে রাজনীতি থেকে শুরু করে প্রশাসনের কিছু ছায়াচরিত্র পর্যন্ত রীতিমতো বিনিয়োগ করে। অর্থনীতি বলছে, যেখানে চাহিদা, সেখানেই জোগান। নারায়ণগঞ্জে যেখানে গণপরিবহন নেই, সেখানে মানুষ কী করে? অটোয় চড়ে বসে — আর যানজটে বসে হা করে আকাশ দেখে।

সভায় হকার প্রসঙ্গও উঠেছে। শহরের ফুটপাত এখন আর হাঁটার জায়গা নয়, বরং একেকটি ক্ষুদ্র দোকানপাটের করপোরেট শাখা। কেউ বই বিক্রি করে, কেউ কাচাবাজার। কিন্তু কেউ-ই কর দেয় না, সবাই "গরিবের বন্ধু" পরিচয়ে রাজনীতির ছত্রছায়ায় ফুলেফেঁপে ওঠে।

তবে জেলা প্রশাসক জাহিদুল ইসলাম মিঞা সাহসী মানুষ। সভায় তিনি যা বললেন, তা শুনে মনে হলো—তিনি চাইলেই পারেন নারায়ণগঞ্জে দ্বিতীয়বার স্বাধীনতা এনে দিতে। কিন্তু প্রশ্ন হলো, মাঠে নামলে তিনি কি একা হবেন? তার পাশে কি থাকবে রাজনৈতিক দলগুলো, যাদের প্রতিনিধি এই সভাতেই বসেছিলেন? নাকি তারা রিকশাচালকের ভোটের ভয় বা হকারের ‘ভালবাসা’য় আবারও পিছিয়ে পড়বেন?

নারায়ণগঞ্জ শহর যেন সেই প্রেমিক, যে বারবার প্রতিশ্রুতি পায় “এবার ঠিক হবে, এবার ভালোবাসা নিষ্কলুষ হবে”—কিন্তু পরক্ষণেই তার প্রেমিক বা প্রেমিকা আবার আগের অভ্যাসে ফিরে যায়।

এ শহরের বুকে যতদিন ‘নিয়ন্ত্রণহীন স্বাধীনতা’ নামে বাহনগুলো চলবে, ততদিন সভা হবে, সিদ্ধান্ত হবে—কিন্তু বাস্তবে রাস্তায় নামলে দেখা যাবে, সেই পুরনো জ্যামে বসে কেবল সিদ্ধান্তের ফিসফাস শুনতে পাওয়া যায়।

সম্পর্কিত বিষয়:

আরও পড়ুন